বাংলাদেশিদের জন্য দরজা খুলে দিল স্পেন। দেখুন কিভাবে আবেদন করবেন

স্পেনের প্রতি বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া উন্মুক্ত হওয়া নতুন সম্ভাবনার দ্বার এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সম্প্রতি স্পেন ও বাংলাদেশের সরকারের মধ্যে অনুষ্ঠিত মিটিংয়ে দক্ষ এবং অদক্ষ কর্মীদের নিয়োগ বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট প্রক্রিয়ার সহজ করণের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে।

স্পেনে বর্তমানে কর্মরত প্রায় ৬০,০০০ বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা এ আলোচনায় উঠে এসেছে। এই উদ্যোগ শুধুমাত্র দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করবে না বরং হাজারো বাংলাদেশির ইউরোপে কাজের স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হবে।

Table of Contents

বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপের কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনা

বাংলাদেশিদের জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে স্পেন। সম্প্রতি স্পেন ও বাংলাদেশের বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের এক মিটিংয়ে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং ম্যানপাওয়ার রিক্রুটমেন্ট বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। উক্ত আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও অদক্ষ উভয় ধরনের কর্মী নিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি করা। এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে লাখো বাংলাদেশির ইউরোপে কাজের স্বপ্ন পূরণের পথ সুগম হবে।

মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন স্পেনের অ্যাম্বাসেডর গ্যাব্রিয়েল সিস্তিয়াগা, যিনি স্পেনে বাংলাদেশি কর্মীদের অবদান সম্পর্কে আলোকপাত করেন। বর্তমানে স্পেনে প্রায় ৬০,০০০ বাংলাদেশি কর্মরত, যারা বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। মিটিংয়ে এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়, যাতে উভয় দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হয়।

দক্ষ ও অদক্ষ কর্মীদের জন্য স্পেনে কাজের সুযোগ

স্পেন সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ গুলো বাংলাদেশের কর্মী এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ ইতিবাচক। ম্যানপাওয়ার এগ্রিমেন্টের আওতায় স্টুডেন্ট ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট ভিসার প্রক্রিয়া সহজ করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। এর ফলে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা স্পেনের উন্নত শিক্ষাব্যবস্থায় পড়াশোনা করার সুযোগ পাবেন। একইসঙ্গে চাকরি খুঁজে নেওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা ভোগ করবেন।

দক্ষ কর্মী থেকে শুরু করে অদক্ষ কর্মী—সবাই এই সুযোগের আওতায় আসতে পারে। যারা দক্ষ কর্মী হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে সক্ষম, তারা স্পেনের বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করার সুযোগ পাবেন। অন্যদিকে, অদক্ষ কর্মীরাও বিভিন্ন প্রাথমিক কাজের জন্য নিয়োগ পাবেন। এই উদ্যোগ উভয় দেশের জন্য পারস্পরিক লাভজনক অবস্থান তৈরি করবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে স্পেনে ভিসা রেশিও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অতীতে যেখানে ভিসা পাওয়া কঠিন ছিল, এখন স্পেনের উদার নীতিমালার কারণে অনেকেই সহজে ভিসা পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। সুতরাং, যদি আপনার যোগ্যতা থাকে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত থাকে, তাহলে স্পেনে যাওয়ার জন্য এটি একটি উপযুক্ত সময়।

স্পেনে কাজের ভিসার জন্য বিস্তারিত গাইডলাইন

স্পেনে কাজের ভিসা ১৬ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের জন্য যারা কাজের চুক্তি নিয়ে স্পেনে কর্মচারী হিসাবে কাজ করতে চান। এটি বিশেষ মৌসুমী কাজের জন্য প্রযোজ্য, যা বিদেশি কর্মীদের স্পেনের শ্রমবাজারে প্রবেশের সুযোগ প্রদান করবে। তবে, ভিসা পেতে নির্ধারিত কিছু শর্ত পূরণ এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। সেই কাগজপত্রের গুলোর মধ্যে রয়েছে,

১.জাতীয় ভিসা আবেদনপত্র

প্রতিটি আবেদনকারীকে অবশ্যই একটি ভিসা আবেদনপত্র পূরণ এবং স্বাক্ষর করতে হবে। আবেদনপত্রের প্রতিটি অংশ সঠিকভাবে পূরণ করা জরুরি। যদি আবেদনকারী প্রাপ্তবয়স্ক না হন, তাহলে তাদের পিতামাতার একজন আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করবেন।

২. ফটোগ্রাফ

আবেদনকারীরর সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি জমা দিতে হবে। ছবিটি অবশ্যই সদ্য তোলা হতে হবে, সামনের দিকে মুখ করা এবং মুখমণ্ডল স্পষ্ট থাকতে হবে। কোনো রকম অন্ধকার চশমা বা মুখ ঢেকে রাখা পোশাক গ্রহণযোগ্য হবেনা।

৩. বৈধ পাসপোর্ট

আবেদনকারীর বৈধ এবং মেয়াদ রয়েছে এমন পাসপোর্টের মূল কপি ও একটি ফটোকপি জমা দিতে হবে। পাসপোর্টে কমপক্ষে ৪ মাসের মেয়াদ থাকতে হবে এবং দুটি ফাঁকা পৃষ্ঠা থাকতে হবে। পাসপোর্টটি ১০ বছরের বেশি পুরোনো হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

৪. প্রাথমিক বাসস্থান এবং কর্মসংস্থানের পারমিট

নিয়োগকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষরিত প্রাথমিক বাসস্থান এবং কর্মসংস্থানের অনুমতি পত্রের মূল ও একটি অনুলিপি জমা দিতে হবে।

৫. কাজের চুক্তি

বিদেশি নাগরিকদের অফিস থেকে অনুমোদিত এবং স্ট্যাম্প করা কাজের চুক্তির একটি কপি জমা দিতে হবে।

৬. ফৌজদারি রেকর্ড চেক সার্টিফিকেট

আবেদনকারীদের গত পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের নিজ দেশ বা বসবাসের দেশের অপরাধমূলক রেকর্ড নেই এমন সনদের মূল কপি ও অনুলিপি জমা দিতে হবে। নথিগুলিকে বৈধ বা অপোস্টিল করা থাকতে হবে এবং প্রয়োজন হলে স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ করা থাকতে হবে।

৭. মেডিকেল সার্টিফিকেট

মেডিকেল সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে, যা নিশ্চিত করবে যে আবেদনকারী কোনো গুরুতর সংক্রামক রোগে আক্রান্ত নন। নথি বৈধ বা অপোস্টিল করা এবং প্রয়োজনে স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ করা আবশ্যক।

আপনার জন্য আমাদের কিছুকথা

স্পেনে কাজের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ হলেও সঠিক কাগজপত্র এবং নির্দেশনা অনুসরণ করলে এটি সহজ মনে হবে। নিয়োগকর্তার সহযোগিতা এবং প্রয়োজনীয় নথি সঠিকভাবে জমা দেওয়া নিশ্চিত করলে ভিসা অনুমোদনের সম্ভাবনা বাড়বে।

স্পেনের শ্রমবাজার আপনাকে শুধু একটি চাকরির সুযোগই নয়, বরং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার দরজাও খুলে দিবে। যদি আপনি স্পেনে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন, তাহলে এখনই প্রস্তুতি নিন এবং আপনার ভবিষ্যতের ক্যারিয়ারের পথে অগ্রসর হন। ধন্যবাদ, এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *